অষ্টপ্রহরের যাপিত জীবনের গল্প!
বিগত বছরের ২৭শে নভেম্বরের রাত্রি ৯ ঘটিকায় অফিস হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া আপন গৃহে প্রবেশের উদ্যোগ গ্রহনকালে মাতৃদেবীর রণরঙ্গিনী মুর্তি দেখিয়া থমকিয়া যাইতে বাধ্য হইলাম। সত্যি বলিতে ভয় কিসের? সেই বালক বয়স হইতে আরম্ভ করিয়া যৌবনের এই সময়ে আসিয়া ও আমি ধরণীতে এই একমাত্র ব্যক্তিকে কিঞ্চিৎ ডরাইয়া-সমঝাইয়া চলি!
প্রশ্ন আসিলো, "কয়টা বাজে? এতো দেরী কেন?" কী উত্তর দিব, বুঝিতে পারিলাম না। রাত্রি ৯ ঘটিকায় গৃহ প্রবেশ তো আর আমার ক্ষেত্রে নতুন কোন উপসর্গ নহে! এই বিষয়ে বহুবিধ বৃথা বাক্যব্যয় এবং অনাবশ্যক প্রহার (ধোলাই) পর্ব শেষে কোনরূপ ফল না পাইয়া তিনি ইতোমধ্যে হস্ত-পদ উভয়ই ধুইয়া ফেলিয়াছেন!
হুঁশ ফিরিলো পরবর্তী প্রশ্নে। "কালকে না তোর পরীক্ষা?"
সাথে সাথে মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িলো। হায়, হায়, পরবর্তী দিন বিসিএস পরীক্ষা, প্রবেশ পত্র খানা কোথায় রাখিয়াছি?
টেবিলস্থ পুস্তকাদির পর্বত সরাইতে গিয়া বিধাতার অশেষ করুণাতে কিয়ৎক্ষন উহাকে পরে খুঁজিয়া ও পাইলাম।
এইবার নতুন ফরমায়েশ। পার্শ্ববর্তী ভবনে বসবাসরত এক সদ্য বিবাহিতা বৌদিকে পরীক্ষাস্থলে লইয়া যাইতে হইবে!
বিনয়ের সহিত শুধাইলাম, কী আমার অপরাধ? (বিশেষতঃ আমি বেবী সিটিং(Baby Sitting) বস্তুটিকে একবিন্দুও পছন্দ করিনা!)
কারন, হিসেবে জানা গেলো-
১. আমার আর উক্ত বৌদির পরীক্ষা কেন্দ্র একই।
২. বৌদির বরের ও (দাদা) পরীক্ষা, তবে কীনা অন্য কেন্দ্রে, যাইবার পথ ও ভিন্ন।
৩. সর্বোপরি, আমার পড়াশোনার যে ছিরি, মা' নিশ্চিত যে, আমার কোনই সুযোগ নাই; অতএব, নিদেনপক্ষে কিঞ্চিৎ পরোপকার হউক!
অনুরোধে ঢেকি গিলিলাম; মাতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করিয়া দ্রুতবেগে নিদ্রা দিলাম।
প্রভাতে সে এক নতুন উপদ্রব। ১০ ঘটিকায় পরীক্ষা আরম্ভ হইবে, আমি ৯ ঘটিকায় গৃহ-বহিঃর্গমণে ইচ্ছুক; সপ্তাহে এই একমাত্র দিন, নিদ্রার ব্যতিরেকে কাহারো সহিত কোন প্রকার আপোষে আমি বহুদিবসের অনিচ্ছা।
কিন্তু, বিধি বাম! মাতৃদেবীর তিরষ্কারে প্রায় ৭ ঘটিকায় গাত্রোত্থানে বাধ্য হইলাম। জানিলাম, সেই বৌদি সাজিয়া-গুজিয়া ফিটফাট হইয়া আমার গৃহেই চলিয়া আসিয়াছেন। সুতরাং, নিদ্রার চুড়ান্ত স্পেল বিসর্জন দিয়া বৌদিসকাশে পরীক্ষা কেন্দ্রের পানে ধাবিত হইলাম।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জৈষ্ঠ্য পুত্রেরে বদৌলতে যে ত্রিচক্রযানসমুহের সাক্ষাৎ এ অভাগা জাতি পাইয়াছিলো (লোকে ইহাকে সিএনজি বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকে), তাহাতে চড়িয়া ৮ ঘটিকাতেই সেস্থলে পৌঁছিয়া গেলাম!নির্বাক নয়নে দেখিলাম, আমাদিগের ন্যায় অতীব উৎসাহীর অভাব নাই! কেন্দ্রের সিংহদরজা উম্মোচিত হইবে ৯ ঘটিকা নাগাদ। বাইরে বসিবার স্থানাভাবে দন্ডায়মান থাকাই শ্রেয়। বিরক্তির চরমসীমায় পৌঁছিলাম যখন পার্শ্ববর্তী অতিউৎসাহী পরীক্ষার্থীগণের প্রস্তুতি ও অন্যান্য সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্নবানে জর্জরিত হইতে লাগিলাম। বুঝিলাম, নারী সংসর্গে অবস্থান করিবার কারণেই অপরদিগের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হইয়াছি! মনে মনে বলিলাম, "রে নরাধম লুলগণ, চক্ষুর মাথা খাইয়াছিস! উহার সিঁথিতে রক্তবর্ণ সিঁদুর ও তোদের কামনার বিষবাষ্পে জল ঢালিতে সক্ষম নয়? এই জাতীয় সরকারী কর্মকর্তা রাষ্ট্রের কোন কাজে আসিবে!"
যাহা হউক, আধুনিক সভ্যতার সংস্পর্শে থাকিয়া ভদ্রতার মুখোশ পরিধান করিয়াছি বলিয়াই বৌদিকে সযতনে আগলাইয়া মনের কথা মনেই চাপিয়া রাখিলাম আর সময়যন্ত্রের সাহায্যে উল্টাগণণ (countdown) চালাইতে লাগিলাম।
এক সময়, আমার বারো ঘটিকা বাজিবার কিয়ৎক্ষণ পুর্বেই সেই আরাধ্য ৯ ঘটিকা হইলো। বৌদিকে তাঁহার কক্ষে প্রবেশ করাইয়া দিয়া আমি ও নিজস্ব কক্ষে প্রবেশ করিলাম।
পরীক্ষার প্রশ্ন পাইবা মাত্র যে পরিমাণ হা-হুতাশ চারিপাশ হইতে ভাসিয়া আসিতে ছিল, তাহা দেখিয়া বুঝিলাম, প্রশ্ন হার্ড হইয়াছে। তা আমার কী? লেংটার নাই বাটপারের ভয়! সেইদিন এক ঘন্টা ব্যাপী ২০-২০ ম্যাচ খেলিয়া আবার বৌদি সকাশে গৃহে ফিরিয়া আসিয়াছিলাম।
সর্বশেষে বলিতে চাই, এই রাষ্ট্রের সরকারী চাকুরীতে যে এখনো গরু-গাধাদিগের স্থান রহিয়াছে, তার উজ্জ্বল নিদর্শনরূপে ২৮ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারীতে উর্ত্তীর্ণ হইয়াছি। এক্ষনে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বিগত সপ্তাহে কতিপয় পুস্তক খরিদ করিয়াছি (কষ্টার্জিত অর্থের নির্মম শ্রাদ্ধ আর কাহাকে বলে?!)। দু;খের বিষয় এই যে, উক্ত পরীক্ষার আসন বরাদ্দ সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কিছুই জানিতে পারি নাই। লোকমুখে শুনিতে পাইলাম, উহা প্রকাশিত হইয়াছে, অথচ, পিএসসি এর আন্তর্জালে (website) উহার কোন হদিশ না পাইয়া এক্ষনে সহ ব্লগারদিগের সরণাপন্ন হইলাম। কেহই কি নাই, যিনি এই হত-দরিদ্রের আশা পূরণে সক্ষম!
আবোল তাবোল-৪
আবোল তাবোল-৩
আবোল তাবোল-২
আবোল তাবোল-১
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৭